আধুনিক বাংলা কবিতার বিকাশের ধারা: [সংক্ষিপ্ত]

কবিতা : 

অপরিহার্য শব্দের অবশ্যম্ভাবী বাণী বিন্যাসকে কবিতা বলে। মানব মনের ভাব-কল্পনা তথা জগৎ ও জীবন বিষয়ক অনুভূতি আপন মনের রঙ্গে রঞ্জিত করে যথাযথ শব্দসম্ভারে বাস্তব সুষমামণ্ডিত চিত্রাত্মক ও ছন্দোময় রূপদান করাকে কবিতা বলে। 

গীতি কবিতা : 

কবির একান্ত ব্যক্তি অনুভূতি যখন সহজ ও সাবলিন গতিতে সঙ্গীতমুখর হয়ে আত্মপ্রকাশ করে তখনই গীতিকবিতার জন্ম।

বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন- ‘বক্তার ভাবোচ্ছ্বাসের পরিস্ফুটন মাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতি কাব্য ।

কবির একান্ত অনুভূতি ও কল্পনা সুর ও সঙ্গীতের পাখায় ভর করে এক নিটোল রসমূর্তি ধারণ করে, সেই সঙ্গীতময় বাকমূর্তির নাম গীতি কবিতা ।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯) : পুরনো এবং নতুন যুগের সন্ধিক্ষণে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের আবির্ভাব । তাঁর কবিতায় একই সঙ্গে মধ্যযুগের এবং আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় । তাঁর জীবতকালে প্রকাশিত গ্রন্থ- কালীকীর্তন (১৮৩৩), প্রবোধ প্রভাকর (নাটক), মৃত্যুর পর তাঁর কবিতাবলি রামচন্দ্র গুপ্ত ও বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় । গীতি কবিতা তার হাতে সফলরূপ পায়নি ।

রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২৭-১৮৮৭): তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ গুলো হল- পদ্মিনী উপাখ্যান (১৮৫৮), কর্মদেবী (১৮৬২), শূর সুন্দরী, নীতি কুসুমাঞ্জলি, কাঞ্চী কাবেরী,

* রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ কাব্যের মাধ্যমেই উনবিংশ শতকে আখ্যান কাব্যের সূচনা ঘটে । এটি আধুনিক যুগের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৯৭৩): কাব্যগ্রন্থ— তিলোত্তমা সম্ভব (১৮৬০) কাহিনী কাব্য, মেঘনাদ বধ (১৮৬১) মহাকাব্য, বীরাঙ্গনা (১৮৬২) পত্রকাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি (১৮৬৬) সনেটের সংকলন, ব্রজাঙ্গনা (গীতিকাব্য) । মধুসূদন মহাকবি হলে ও ‘আত্মবিলাপ’ ও ‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতা দুটিতে যথার্থ গীতি কবিতার লক্ষণ স্পষ্ট।

বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৯৯৪) – তাঁকে বাংলা সাহিত্যে গীতি কবিতার জনক বলা হয় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিকে ‘ভোরের পাখি’ উপাধিতে ভূষিত করেন । তাঁর প্রকাশিত কাব্যগুলো হল- স্বপ্নদর্শন (১৮৫৮), সঙ্গীতশতক (১৮৬২), বঙ্গসুন্দরী (১৮৭০), নিসর্গ সন্দর্শন (১৮৭০), বন্ধুবিয়োগ (১৮৭০), প্রেম প্রবাহিনী (১৮৭০), সারদামঙ্গল (১৮৭৯), সাধের আসন (১৮৮৯) 

* বিহারীলাল চক্রবর্তীর প্রথম সার্থক গীতিকাব্য- ‘বঙ্গসুন্দরী (১৮৭০)।

ঐ কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার (১৮৩৭-১৯০৫) তাঁর ‘সদ্ভাবশতক’ কাব্যটি নীতিকবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ।

সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৮৩৮-১৯৭৮): ষড়ঋতু বর্ণনা (প্রথম), সবিতা সন্দর্শন, ফুল্লরা, মহিলা কাব্য (১৮৮০)।

 দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪০-১৯২৬): স্বপ্ন প্রয়াণ (১৮৭৫)।

অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী (১৮৫০-১৯১৮): উদাসীন (কাহিনীকাব্য), ভারতগাথা, মাধবীলত কাব্য।

স্বর্ণকুমারী দেবী (১৮৫৫-১৯৩২): কবিতা ও গান, গাথা

গোবিন্দচন্দ্র দাস (১৮৫৬-১৯১৮): তিনি পরিচিত ছিলেন ভাওয়ালের কবি ও কবি’ হিসেবে। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ প্রসূন, প্রেম ও ফুল, বৈজয়ন্তী, কুম্ভরী, চন্দন, ফুলরেণু, শোকাচ্ছ্বোস, শোক ও সান্ত্বনা।

মোজাম্মেল হক (১৮৬০-১৯৩০): ‘শান্তিপুরের কবি’ মোজাম্মেল হক রচিত কাব্যগ্রন্থ গুলো হল- কুসুমাঞ্জলি (গীতিকাব্য), অপূর্বদর্শন (ঐতিহাসিক কাহিনী কাব্য) প্রেমহার (গীতিকাব্য), হযরত মোহাম্মদ (জীবনীকাব্য)।

অক্ষয়কুমার বড়াল (১৮৬১-১৯১৯): কাব্যগ্রন্থ- প্রদীপ (প্রথম), কণকাঞ্জলি, ভুল, শঙ্খ, এষা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১): বাংলা সাহিত্যে বিহারীলাল চক্রবর্তীর হাতে গীতি কবিতার সার্থক সূচনা হলেও রবীন্দ্রনাথে এসে তা পূর্ণতা পায়। রবীন্দ্রনাথের কাব্যগুলো সম্পর্কে জানার জন্য পরবর্তী টপিক – ‘’আধুনিক বাংলা কাব্য ও কবিতাঃ [বিস্তারিত] ‘’অংশ দেখুন।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩): নাট্যকার হিসেবে পরিচিত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কাব্যগ্রন্থ গুলো হল- আর্যগাথা, মন্দ্র, আলেখ্য, ত্রিবেণী, হাসির গান ইত্যাদি ।

সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৯-১৯২৯): বৈতালিক, দোল। তিনি ঠাকুর বাড়ির প্রথম গ্র্যাজুয়েট ।

মানকুমারী বসু (১৮৬৩-১৯৪৩) প্রিয় প্রসঙ্গ, বনবাসিনী ।

কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩): আলো ও ছায়া, মাল্য ও নির্মাল্য, পৌরাণিকা, আশোক সঙ্গীত, গুঞ্জন, দীপ ও ধূপ, জীবন পথে ।

কুসুমকুমারী দাশ (১৮৮২-১৯৪৮): কাব্য- কবিতা মুকুল ।

খোন্দকার শামসুদ্দিন মুহম্মদ সিদ্দিকী (১৮০৮-১৮৭০): তিনি ‘ভাবলাভ’ (১৮৫৩) এবং ‘গুরতজান’ নামে দুটি রচনা করেন।

আবদুর রহিম: কাব্য ‘প্রেমলীলা’ (১৮৬১)। –


পরবর্তী সময়ে কায়কোবাদ, মীর মশাররফ হোসেন, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, জসীম উদ্দীন, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ সহ অনেক কবি আধুনিক কবিতার ধারা ঋদ্ধ করেছেন। তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগুলো সম্পর্কে জানার জন্য পরবর্তী টপিক – ‘’আধুনিক বাংলা কাব্য ও কবিতাঃ [বিস্তারিত] ‘’অংশ দেখুন।

Write Reply...