আরাকান রাজসভা
দেব-দেবীদের মাহাত্ম্য কীর্তনে যখন মুখরিত মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, তখন বার্মার অন্তর্ভুক্ত ‘মগের মুল্লুক’ এ আরাকানের বৌদ্ধ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের যে বিকাশ সাধিত হয় তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মায়ানমারের উত্তর-পশ্চিম সীমায় এবং চট্টগ্রামের দক্ষিণে সমুদ্রের তীরে আরাকানের অবস্থান। আরাকানকে বাংলা সাহিত্যে ‘রোসাঙ্গ নামে অভিহিত করা হয়। মধ্যযুগে ধর্মসংস্কারমুক্ত ঐহিক কাব্যকথার প্রবর্তন করেন মুসলমান কবিগণ এবং তা আরাকান রাজসভাকে কেন্দ্র করে রূপায়িত হয়ে উঠে। একান্ত মানবিক প্রেমাবেদন-ঘনিষ্ঠ এসব কাব্য অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ সময়ের কবিগণের পুরোধা দৌলত কাজী বাংলা রোমান্টিক কাব্যধারার পথিকৃৎ হিসেবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
বাংলা সাহিত্যে আরাকানকে রোসাঙ্গ বলা হয় , সপ্তদশ শতকে এ অঞ্চল বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক প্রসারে বিশেষ অবদান রাখে।
আরাকান রাজসভার আদি কবি ও প্রথম বাঙালি কবি দৌলত কাজী । তিনি লৌকিক কাহিনীর প্রথম রচয়িতা। তাঁর
উল্লেখযোগ্য কাব্যের নাম: ‘সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী। এটি হিন্দি কবি সাধনের ‘মৈনাসত’ কাব্য অবলম্বনে তিন রচিত।
আরাকান রাজসভার শ্রেষ্ঠ কবি আলাওল । ‘পদ্মাবতী’ (১৬৪৮), ‘সয়ফুলমূলক বদিউজ্জামাল”,
‘হপ্তপয়কর’, ‘সিকান্দরনামা’, ‘তোহফা’ তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা।
পদ্মাবতী মালিক মুহম্মদ জায়সীর হিন্দি ভাষায় রচিত ‘পদুমাবৎ’অবলম্বনে আলাওল ‘পদ্মাবতী’ (১৬৪৮) রচনা করেন।
‘চন্দ্রাবতী’ কোরেশী মাগন ঠাকুর রচনা করেন, কোরেশী মাগন ঠাকুর ছিলেন রোসাঙ্গরাজের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ ও ‘সয়ফুলমূলক বদিউজ্জামাল’ কাব্য রচনায় পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন ।
আরাকান রাজসভার বাংলা সাহিত্য
সাহিত্যিক | সাহিত্যকর্ম |
দৌলত কাজী | ‘সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী’ (১৬৫৯) |
আলাওল | ‘পদ্মাবতী’, ‘হপ্তপয়কর’, ‘সিকান্দরনামা’, ‘তোহফা’ (নীতিকাব্য), ‘সয়ফুলমূলক বদিউজ্জামাল’ |
কোরেশী মাগন ঠাকুর | ‘চন্দ্রাবতী’ |
মরদন | ‘নসীরানামা’ |
আবদুল করিম খন্দকার | ‘দুল্লা মজলিস’, ‘নূরনামা’ |
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন- পাঠান শাসকবর্ষ।
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণালি সময়কাল মোঘল যুগ
বাংলা সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বিখ্যাত -আলাউদ্দিন হোসেন শাহ।
বাহরাম খানকে ‘দৌলত উজির’ উপাধি প্রদান করেন নৃপতি নেজাম শাহ সুর ।
কবি হাফিজকে বাংলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ।
সম্রাট আকবরের সভাকবি ছিলেন আবুল ফজল। তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আইন-ই-আকবরী’।
কৃষ্ণনগর রাজসভার কবি কে ছিলেন? ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর।
আরাকান রাজসভার উল্লেখযোগ্য কবি – দৌলত কাজী, আলাওল, কোরেশী মাগন ঠাকুর, মরদন, আবদুল করিম খন্দকার।
মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত কাব্যসমূহের তালিকা:
সুলতান | কবি | কাব্য |
গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ | শাহ মুহম্মদ সগীর | ইউসুফ জোলেখা |
জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ | কৃত্তিবাস | রামায়ণ |
রুকনউদ্দিন বরবক শাহ | মালাধর বসু | শ্ৰীকৃষ্ণবিজয় |
শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ | জৈনুদ্দীন | রসুলবিজয় |
আলাউদ্দীন হোসেন শাহ | বিপ্রদাস পিপিলাইবিজয়গুপ্তযশোরাজ খান | মনসাবিজয়মনসামঙ্গলবৈষ্ণবপদ |
নাসিরুদ্দীন নুসরত শাহ | বিদ্যাপতিকবীন্দ্র পরমেশ্বর | বৈষ্ণবপদমহাভারত |