নাটক ও প্রহসনের উদ্ভব ও বিকাশ [সংক্ষিপ্ত]

নাটক

সংস্কৃত আলঙ্কারিকেরা নাট্য সাহিত্যকে কাব্য সাহিত্যের মধ্যে স্থান দিয়েছেন। তাঁদের মতে কাব্য দুই প্রকার- দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্য । নাটক প্রধানত দৃশ্যকাব্য এবং সকল কাব্যসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ- কাব্যেষু নাটকং রম্যম্ ।

রঙ্গমঞ্চের মাধ্যমে অভিনয় শিল্পীদের সাহায্যে মানবের চলমান জীবনের সুখ-দুঃখকে যখন সংলাপের বিনিময়ে দর্শকের সামনে উপস্থিত করা হয়, তখন তা নাটক হয় । নাটক হল দর্পণমানুষের দর্পণ, সমাজের দর্পণ ।

প্রহসন

সমাজের কু-রীতি শোধনার্থে রহস্যজনক ঘটনা সংবলিত হাস্যরস প্রধান একাঙ্কিকা নাটককে প্ৰহসন বলে ।

→ ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা কলকাতায় সর্বপ্রথম রঙ্গমঞ্চ স্থাপন করেন ।

১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে রুশদেশীয় হেরাসিম লেবেডফ ‘বেঙ্গল থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি ‘Disguise’ এবং ‘Love is the best Doctor’ নামে দুটি ইংরেজি নাটকের বাংলা অনুবাদ করেন । এ বছরই এ দুটি বাংলা নাটকের প্রথম অভিনয় হয় ।

১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রসন্নকুমার ঠাকুর কর্তৃক ‘হিন্দু থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ইংরেজি নাটক অভিনীত হত।

→ ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে নবীনচন্দ্র বসুর বাড়িতে ভারতচন্দ্রের ‘বিদ্যাসুন্দরে’র অভিনয় হয় । বাংলা মৌলিক নাটক রচনার সূত্রপাত ১৮৫২ সালে ।

→ ভারচরণের ভদ্রার্জুন (১৮৫২) ইংরেজি ও সংস্কৃত প্রভাবে রচিত প্রথম মৌলিক নাটক।

→ যোগেশচন্দ্র গুপ্তের কীর্তিবিলাস (১৮৫২) বাংলা ভাষার প্রথম ট্রাজেটি নাটক

→ হরচন্দ্র ঘোষ ভানুমতি চিত্তবিলাস’, ‘চারুমুখ চিত্তহারা’ দুটি সেক্সপীয়রের নাটক থেকে অনুবাদ করেন।

রামনারায়ণ তর্করত্ন (১৮২২-১৯৮৬):

 (১) কুলীনকুল সর্বস্ব (১৮৫৪) প্রথম সম্পূর্ণ মৌলিক সামাজিক নাটক

(২)অনূদিত নাটক- বেণীসংহার, রত্নাবলী, অভিজ্ঞান শকুন্তলা, মাধবীলতা । 

(৩)পৌরাণিক নাটক- রুক্মিণীহরণ, কংসবধ, ধর্মবিজয় ।

(৪)প্রহসন- যেমন কর্ম তেমন ফল, উভয় সঙ্কট, চক্ষুদান

রামনারায়ণ তর্করত্নের অন্যান্য নাটক- স্বপ্নধন (রোমান্টিক), সম্বন্ধসমাধি (বাল্যবিবাহের দোষ), বিবাহের কুপ্রথা) । নবনাটক (বহু

মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-৭৩): 

শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯, প্রথম সার্থক নাটক), পদ্মাবতী (১৮৬০), কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১ প্রথম সার্থক ট্র্যাজেডি), মায়াকানন (১৮৭৪), সুভদ্রা, রিজিয়া ।

প্রহসন- একেই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ ।

কালী প্রসন্ন সিংহ- 

বাবু নাটক 

দীনবন্ধু মিত্র ১৮৭৩ঃ

নাটক- নীলদর্পন (১৮৬০- প্রথম নাটক), লীলাবতী, কমলে কামিনী, নবীন তপস্বিনী । 

প্রহসন- জামাই বারিক (১৮৭২), বিয়ে পাগলা বুড়ো, সধবার একাদশী ।

গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪-১৯১২)

ঐতিহাসিক নাটক- সিরাজউদ্দৌলা (১৯০৬), মীর কাশিম, ছত্রপতি শিবাজী ।

পৌরাণিক নাটক- অকালবোধন, রাবণবধ, সীতার বনবাস, সীতাহরণ, অভিমন্যুবধ, জনা, পাণ্ডবকৌরব ।

সামাজিক নাটক- প্রফুল্ল, হারানিধি, বলিদান, মায়াবসন ।

মনোমোহন বসু (১৮৩১-১৯১২)

পৌরাণিক নাটক-রামাভিষেক, সতী, হরিশচন্দ্র ।

সামাজিক নাটক- প্রণয়পরীক্ষা, আনন্দ নাটক ।

মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২)

বসন্ত কুমারী (১৮৭৩) – মুসলিম নাট্যকারের প্রথম নাটক,

মীর মশাররফ হোসেনের অন্যান্য নাটক  জমিদার দর্পণ, বেহুলা গীতাভিনয়, টালাভিনয় ।

প্রহসন- এর উপায় কি, ভাই ভাই এইতো চাই, ফাঁস কাগজ, একি ।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩)

ঐতিহাসিক নাটকঃ তারাবাঈ, রানা প্রতাপ সিংহ, সাজাহান, সোহরাব রুস্তম, নূরজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, সিংহল বিজয়, মেবারপতন ।

পৌরাণিক নাটক- পাষাণী, সীতা, ভীষ্ম ।

সামাজিক নাটক- পরপারে, বঙ্গনারী

গ্রহসন- কল্কি অবতার, বিরহ, ত্র্যহস্পর্শ, পুনর্জন্ম, প্রায়শ্চিত্ত ।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৮-১৯২৫)

ঐতিহাসিক নাটকপুরুবিক্রম, সরোজিনী, অশ্রুমতী, স্বপ্নময়ী । –

প্রহসন- কিঞ্চিৎ জলযোগ, এমন কর্ম আর করব না, হিতে বিপরীত, হঠাৎ নবাব, দায়ে পড়ে দারগ্রহ ।

অমৃতলাল বসু (১৮৫৩-১৯২৯)

নাটক – হীরকচূর্ণ নাটক,তরুবালা, বিমাতা বা বিজয়বসত্ত, হরিশ্চন্দ্র, আদর্শবন্ধু, নবযৌবন, যাজ্ঞসেনী ।

প্রহসন- বিবাহ বিভ্রাট, সম্মতি সঙ্কট, কালাপানি, বাবু, ডিসমিস, চাটুয্যে- বাঁড়ুয্যে, তাজ্জব ব্যাপার, রাজা বাহাদুর, বৌমা, সাবাস আটাশ, কৃপণের ধন, অবতার, বাহবা কার্তিক, দ্বন্দ্বে মাতরম ।

উপেন্দ্রনাথ দাস- 

সুরেন্দ্র বিনোদিনী, শরৎ সরোজিনী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তাঁর নাটকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় পরবর্তী টপিক- নাটক ও প্রহসনের উদ্ভব ও বিকাশ [বিস্তারিত] এ দেওয়া আছে ।

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (১৮৬৩-১৯২৭) 

ঐতিহাসিক নাটক- প্রতাপাদিত্য, পলাশীর প্রায়শ্চিত্ত, পদ্মিনী, আশোক, চাঁদবিবি পৌরাণিক- বভ্রুবাহন, সাবিত্রি, উলুপী, ভীষ্ম, মন্দাকিনী, নরনারায়ণ রোমান্স ও কৌতুকধর্মী- আলিবাবা, বেদৌরা, বরুণা, কিন্নরী।

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)

আলেয়া, মধুমালা, ঝিলিমিলি, পুতুলের বিয়ে, বনের বেদে, শ্রীমন্ত। 

জসীম উদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬)

পদ্মাপার (১৯৫৩), মধুমালা, বেদের মেয়ে, পল্লীবধূ, গ্রামের মায়া, ওগো পুষ্পধনু, আসমান সিংহ ।

নরুল মোমেন (১৯০৬-১৯৮৯)

রূপান্তর, নেমেসিস, যদি এমন হোত, নয়া খান্দান, আলোছায়া, শতকরা আশি, আইনের অন্তরালে, যেমন ইচ্ছা তেমন ।

শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮)

আমলার মামলা, তস্কর ও লস্কর, কাঁকরমণি, বাগদাদের কবি, পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা ।

সিকান্দার আবু জাফর (১৯১৯-১৯৭৫)

সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৫), মহাকবি আলাওল, শকুন্ত উপাখ্যান, মাকড়সা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ (১৯২২-১৯৭১) বহিপীর, সুড়ঙ্গ, তরঙ্গভঙ্গ, উজানে মৃত্যু । 

মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১)

পূর্ণাঙ্গ নাটক- রক্তাক্ত প্রাপ্তর (১৯৬২), চিঠি (১৯৬৬)।

মৌলিক একাঙ্ক নাটক- নেতা, গুপ্তা, রাজার জন্মদিনে, সংঘাত, মানুষ, পলাশীব্যারাক, ফিটকলাম, নষ্টছেলে, আপনি কে, মিলিটারী, কবর, দণ্ড, দণ্ডধর, দণ্ডকারণ্য, বংশধর, মর্মান্তিক 

অনুবাদ নাটক (পূর্ণাঙ্গ)- কেউ কিছু বলতে পারেনা, রূপার কৌটা, জনক, মুখরা রমন বশীকরণ। ,

আনিস চৌধুরী (১৯২৯-১৯৯০)

মানচিত্র, অ্যালবাম, চেহারা, তবু ও অনন্যা।

মমতাজ উদ্দীন আহমদ (১৯৩৫)

নাট্যত্রয়ী, স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা, বিবাহ, কি চাহ শঙ্খচিল, জমিদার দর্পণ, বকুলপুরে স্বাধীনতা, রাক্ষুসী, বর্ণচোরা, স্বাধীনতার সংগ্রাম, ফলাফল নিম্নচাপ, হরিণ চিতা চিল, কোকিল, সাতঘাটের কানাকাড়ি।

আবদুল্লাহ আল মামুন (১৯৪২-২০০৮)

 শপথ, সুবচন নির্বাসনে, এখন দুঃসময়, সেনাপতি, অরক্ষিত মতিঝিল, চারদিকে যুদ্ধ, এখন ও ক্রীতদাস, কোকিলারা, স্পর্ধা, মেরাজ ফকিরের মা, কুরসি, আয়নায় বন্ধুর মুখ । 5 ড. সেলিম আল দীন (১৯৪৮-২০০৮) সর্প বিষয়ক গল্প ও অন্যান্য, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, চাকা, যৈবতী কন্যার মন, হরগজ, হাতহুদাই, একটি মারমা উপকথা, কেরামতমঙ্গল, কিত্তনখোলা, করিম বাওয়ালীর শত্রু অথবা মূল মুখ দেখা, শকুন্তলা, অনিকেত অন্বেষন, সংবাদ কার্টুন, মুনতাসির ফ্যান্টাসী ।

Write Reply...