প্রবন্ধের উদ্ভব ও বিকাশ
বুৎপত্তিগত অর্থে প্রকৃষ্ট বন্ধনযুক্ত রচনাকেই প্রবন্ধ বলা যেতে পারে । Staintsbury প্রবন্ধকে ‘Work of prose art’ বলেছেন। সাধারণ কল্পনা ও বুদ্ধিবৃত্তিকে আশ্রয় করে লেখক কোন |বিষয়বস্তু সম্বন্ধে যে আত্মসচেতন নাতিদীর্ঘ সাহিত্যরূপ সৃষ্টি করেন তাকেই প্রবন্ধ বলা হয় । তবে প্রবন্ধ আকারে দীর্ঘও হতে পারে । যেমন – বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণচরিত’, শরৎচন্দ্রের ‘নারীর [মূল্য’, কৃষ্ণচন্দ্র মজুদমদারের ‘প্রবাসীর জন্মভূমি দর্শন’ প্রভৃতি। তবে গদ্যে নাতিদীর্ঘ রচনাই প্রবন্ধের আদর্শ। ।
শ্রীরামপুর মিশনারীরাই প্রথমে ধর্মপ্রচারার্থে প্রবন্ধ সাহিত্য সৃষ্টি করেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের তৎকালীন পাদ্রি, পণ্ডিতরা যেসব গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তাতে প্রবন্ধের লক্ষণ ছিল, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার রচিত ‘প্রবোধ চন্দ্রিকা’ গ্রন্থে প্রবন্ধের লক্ষণ দেখা যায় । তাঁর ‘বেদান্ত চন্দ্ৰিকা’ (১৮১৭) প্রবন্ধগ্রন্থ ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রবন্ধ সাহিত্যের পুষ্টির দিক থেকে দিগদর্শন, সমাচার দর্পণ, সংবাদ প্রভাকর, তত্ত্ববোধিনী, এসব পত্রিকার দান স্মরণীয় ।
রাজা রামমোহন রায় (১৭৭৪-১৮৩৩) :
রাজা রামমোহন রায় রচিত ‘বেদাত্ত গ্রন্থ (১৮১৫), বেদান্ত সার (১৮১৮), ভট্টাচার্যের সহিত বিচার (১৮১৭), গোস্বামী সহিত বিচার (১৮১৮), প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ, উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ গ্রন্থ হিসেবে পরিচিতি। তিনিই প্রথম ধর্ম ও সংস্কার আন্দোলনের প্রয়োজনে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বাংলা গদ্য ব্যবহার করেন । তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক প্রবন্ধ রচয়িতা।
কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮১৩-১৮৮৫) :
তাঁর মৌলিক প্রবন্ধ গ্রন্থগুলো হলউপদেশ কথা, সত্য স্থাপন মিথ্যানাশন, ধৰ্ম্ম জিজ্ঞাসুদের শিক্ষার্থ প্রশ্নোত্তর, ধর্ম্ম পোষক বক্তৃতা, ষড়দর্শন সংবাদ প্রভৃতি ।
তারানাথ তর্কবাচস্পতি (১৮০৬-১৮৮৫) :
তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থগুলো হল- বহুবিবাহবাদ, বিধবা বিবাহ খণ্ডন, শব্দার্থরত্ন ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) :
তিনি বিধবা বিবাহ প্রচলন ও বহু বিবাহ রহিত করণের জন্য আন্দোলনে নেমে প্রবন্ধ রচনায় হাত দেন। তাঁর প্রবন্ধগুলো হল – বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদূবিষয়ক প্রস্তাব, বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদবিষয়ক বিচার, অতি অল্প হইল, আবার অতি অল্প হইল, ব্রজবিলাস, রত্ন পরীক্ষা, বিধবা বিবাহ ও যশোহর হিন্দুধর্ম রক্ষিণী সভা ।
ভূদেব মুখোপাধ্যায় (১৮২৫-১৯৯৪)
শিক্ষা বিধায়ক প্রস্তাব, পুষ্পাঞ্জলি, পারিবারিক প্রবন্ধ, আচার প্রবন্ধ, বিবিধ প্রবন্ধ, স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস ।
রাজনারায়ণ বসু (১৮২৬-১৯৯৯)
ব্রহ্মসাধন, ধৰ্ম্ম তত্ত্বদীপিকা, প্রকৃত অসাম্প্রদায়িকতা কাহাকে বলে?, হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠতা, সেকাল ও একাল, সার ধর্ম্ম, বৃদ্ধ হিন্দুর আশা। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গৃহশিক্ষক ছিলেন ।
সঞ্জীবচ চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৪-১৮৮৯) :
তাঁর ‘পালামৌ’ ভ্রমণোপন্যাস হলেও | প্রবন্ধসুলভ বৈশিষ্ট্য দেখা যায় ।
তাঁর অন্য প্রবন্ধের গ্রন্থ- যাত্রা সমালোচনা ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪)
ব্যঙ্গাত্মক ও সরস প্রবন্ধ গ্রন্থ- লোক রহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত। →
জ্ঞান বিজ্ঞান ও সমালোচনা বিষয়ক- বিজ্ঞান রহস্য, সাম্য, বিবিধ সমালোচনা, বিবিধ প্ৰবন্ধ ।
দর্শন ও শাস্ত্রচর্চা বিষয়ক- কৃষ্ণচরিত, ধর্মতত্ত্ব অনুশীলন ।
জীবনী বিষয়ক- রায় দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী, ঈশ্বরগুপ্তের জীবন চরিত ও কবিত্ব, বাঙ্গালা সাহিত্যে প্যারীচাঁদ, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী ।
কালী প্রসন্ন ঘোষ (১৮৪৩-১৯১০)-
নারীজাতি বিষয়ক প্রস্তাব, সমাজ শোধনী, প্রভাতচিত্তা, মানা মহাশক্তি, নিভৃতচিন্তা, সমাজ সংস্কার সম্পর্কিত ।
মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১১) –
গো-জীবন, খুতবা, হযরত বেলালের জীবনী, আমার জীবনী, বিবি কুলসুম বা আমার জীবনীর জীবনী ।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫২- ১৯৩১)
ভারত মহিলা, প্রাচীন বাংলার গৌরব, বৌদ্ধধর্ম, বাল্মীকির জয় ।
রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র (১৮২২-১৮৯১) –
তিনি প্রথম বঙ্গাক্ষরে মানচিত্র প্রকাশ করেন ৷ গ্রন্থ- শিবাজীর চরিত্র, মেবারের রাজেতিবৃত্ত, ব্যাকরণ প্রবেশ ।
*১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে, ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকদের পরিচিতি চ্যাপ্টারের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) অংশের প্রবন্ধ অংশে দেয়া হয়েছে।
প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬)
তেল নুন লকড়ি (১৯০৬), বীরবলের হালখাতা (১৯১৬), বীরবলের টিপ্পনী, নানা কথা (১৯১৯) নানা চর্যা (১৯৩২), রায়তের কথা (১৯২৬), আমাদের শিক্ষা (১৯২০), ঘরে বাইরে, দু ইয়ারকি, প্রাচীন হিন্দুস্থান, আত্মকথা, বঙ্গ সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, প্রাচীন বঙ্গ হিন্দু সাহিত্য মুসলমান, নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন।
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ (১৮৬৯-১৯৬৮)
মোস্তফা চরিত, সমস্যা ও সমাধান, মোসলেম বাংলার সামাজিক ইতিহাস, মুক্তি ও ইসলাম, ইসলামের আদর্শ, রমজানের সাধনা ।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯)-
ভাষা ও সাহিত্য, অমিয় শতক, মহানবী, আমাদের সমস্যা, কুরআন প্রসঙ্গ, মহরম শরীফ, ইসলাম প্রসঙ্গ।
ড. কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১)
সঞ্চরণ, সেইপথ লক্ষ্য করে, নজরুল কাব্য পরিচিতি, নির্বাচিত প্রবন্ধ, ভাই গিরিশচন্দ্র সেন, নওয়াব স্যার সলীমুল্লাহ ।
আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯)-
পাক বাংলার কালচার, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (স্মৃতিচারণ), শেরেবাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু, বেশি দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা ।
কাজী নজরুল ইসলাম-
যুগবাণী, রুদ্রমঙ্গল, রাজবন্দীর জবানবন্দী । 6 মোতাহার হোসেন চৌধুরী (১৯০৩-১৯৫৬) সংস্কৃতি কথা (১৯৫৮), সভ্যতা, সুখ ।
আবুল ফজল (১৯০৩-১৯৮৩)
বিচিত্র কথা (১৯৪৭), সমকালীন চিন্তা, সমাজ সাহিত্য ও রাষ্ট্র ১৯৬৮, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সাধনা, মানবতন্ত্র, সাহিত্য সংস্কৃতি ও জীবন, দর্শনের ইতিকথা, বিদ্রোহী কবি নজরুল, শুভ বুদ্ধি, রবীন্দ্র প্রসঙ্গ, শেখ মুজিব: তাঁকে যেমন দেখেছি, একুশ মানে মাথা নত না করা, সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, লেখকের রোজনামচা, সাংবাদিক মুজিবর রহমান ।
আবুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪)
তুরস্কের ইতিহাস, কবি নজরুল, ছন্দ সমীক্ষণ, কাজী আবদুল ওদুদ, বাংলা ছন্দের ইতিবৃত্ত, যুগ কবি নজরুল ।
রণেশ দাশগুপ্ত (১৯১২-১৯৯৭)
উপন্যাসের শিল্পরূপ, শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে (১৯৬৬), ফয়েজ আহমদের কবিতা, আলো দিয়ে আলো জ্বালা, ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রাম, সেদিন সকালে ঢাকায় ।
ড. নীলিমা ইব্রাহিম (১৯২১-২০০২)
শরৎ প্রতিভা, বাংলার কবি মধুসূদন, বাংলা নাটক : উৎস ও ধারা, বেগম রোকেয়া, সাহিত্য সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ, বাঙ্গালীমানস ও বাংলা সাহিত্য ।
ড. আহমদ শরীফ (১৯২১-১৯৯৯)
বিচিত্র চিন্তা (১৮৬৮), সাহিত্য ও সংস্কৃতি চিন্তা, স্বদেশ অন্বেষা, যুগ যন্ত্রনা, বাঙালী ও বাংলা সাহিত্য, কালের দর্পণে স্বদেশ, বাঙলা ভাষা সংস্কার প্রসঙ্গে, একালে নজরুল, সংস্কৃতি, স্বদেশচিন্তা, বিশ শতকে বাঙ্গালী, জিজ্ঞাসা ও অন্বেষা, বাংলা বাঙালী ও বাঙালীত্ব, প্রগতির বাধা ও পন্থা, মানবতা ও গণমুক্তি ।
কবীর চৌধুরী (১৯২৩-২০১১)
ছয়সঙ্গী, প্রাচীন ইংরেজি কাব্য সাহিত্য, এ্যাবসার্ড নাটক, আধুনিক মার্কিন সাহিত্য, প্রসঙ্গনাটক, সাহিত্যকোষ, সাহিত্য সমালোচনা ও নন্দনতত্ত্ব পরিভাষা, স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়, নজরুল দর্শন, পিকাসো, আগুনের পরশমনি ছোয়াও প্রাণে, তসলিমা নাসরিন ও নারীমুক্তি প্রসঙ্গ, সপ্তরথী, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, রূপকথার কাহিনী ।
মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১)-
মীর মানস (১৮৬৫), তুলনামূলক সমালোচনা, বাংলা গদ্যরীতি 1
বদরুদ্দীন উমর (১৯৩১)-
সাম্প্রদায়িকতা, বাংলাদেশের অভ্যুদয়, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের পথে, আমার পিতা, আমার জীবন, বিবিধ প্রসঙ্গ, মুক্তি কোন পথে, আমাদের ভাষার লড়াই, সংস্কৃতি সংকট, সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ, বাংলাদেশে ধর্মে রাজনৈতিক ব্যবহার।
ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯)
শিল্পীর সাধনা, সাহিত্যের আগম্ভক ঋতু, সাহিত্য সমালোচনা, রবীন্দ্র ক্লাসিক আবিষ্কার, মায়াকভস্কি ও নজরুল, নজরুল গবেষণা : ধারা ও প্রকৃতি ।
ড. গোলাম মুরশিদ (১৯৪০)
বৈষ্ণব পদাবলী প্রবেশক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাংস্কৃতিক পটভূমি, রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ : পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, কালান্তরে গদ্য সাহিত্য, সংকোচের বিহবলতা, মধুর খোঁজে, হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর, যখন পলাতক ।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (১৯৪০)
দুর্বলতায় রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, উত্তর প্রজন্ম, বিস্রস্ত জার্নাল, বন্ধ দরোজায় ধাক্কা, আমার অনুভূতিতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, ভালোবাসার সাম্পান, নিস্ফলা মাঠের কৃষক ।
আহমদ ছফা (১৯৪৩-২০০১)
জাগ্রত বাংলাদেশ (১৯৭১), বাংলাভাষা : রাজনীতির আলোকে, রাজনীতির লেখা, সেইসব লেখা, শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য প্রবন্ধ, সংকটের নানা চেহারা, যদ্যপি আমার গুরু (স্মৃতিকথা), বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র।
ড. করুণাময় গোস্বামী (১৯৪৩-২০১৭)
নজরুল গীতি প্রসঙ্গ, সংগীত কোষ, সংগীত নৃত্যকলা পরিভাষা কোষ, বাংলা গান, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব, বাংলা কাব্যগীতির ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের স্থান ।
ড. মোরশেদ শফিউল হাসান (১৯৫৩)
বেগম রোকেয়া : সময় ও সাহিত্য, অবাক নাম ভিয়েতনাম, ফরাসি বিপ্লবের কথা, রোকেয়া কালে ও কালান্তরে, বাঙলার রূপকথা, ছফা ভাই : আমার দেখা আমার চেনা, পূর্ব বাঙলার চিন্তা চর্চা : দ্বন্দ্ব ও প্রতিক্রিয়া ।