ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও শিখা গোষ্ঠী

→প্রতিষ্ঠিত হয়- ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায়

→ নানা কারণে মুসলমানরা আধুনিক যুগের সূচনার পরবর্তীকালে শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে পড়ে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কতিপয় মুসলমান লেখক সমাজ ও ধর্মসংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ নামক একটি প্রগতিশীল সাহিত্যিক গোষ্ঠী ।

এ সংগঠনের মাধ্যমেই মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ‘শিখা’ (১৯২৭) ছিল এদের বার্ষিক মুখপত্র। এ পত্রিকার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়- “শিখার প্রধান উদ্দেশ্য বর্তমান মুসলমান সমাজের জীবন ও চিন্তাধারার গতির পরিবর্তন সাধন।

→ ‘শিখা’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক আবুল হোসেন। তিনি ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজে’রও সম্পাদক ছিলেন । পরবর্তীতে পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন ড. কাজী মোতাহার হোসেন, মোহাম্মদ আবদুর রশীদ ও আবুল ফজল। এ পত্রিকার উপরে লেখা থাকত- ‘জ্ঞান’ যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ ”শিখা’ পত্রিকাকে ঘিরে যে কজন লেখক ছিলেন তাঁরাই শিখা গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এ গোষ্ঠীর প্রধান লেখকগণ হলেন- কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, আবদুল কাদির, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ ।

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ

* প্রতিষ্ঠাকাল- ২৩ জুলাই ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ ।

পূর্বনাম- বেঙ্গল একাডেমী অফ লিটারেচার (১৮৯৩) ।

* বর্তমান নামকরণ- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হয় ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ এপ্রিল। 

* প্রথম সভাপতি- রমেশচন্দ্র দত্ত, সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ও নবীনচন্দ্র সেন । 

* সম্পাদক- এল লিওটার্ড, দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী । 

* পত্রিকা- ‘সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা’ ।

বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি

* প্রতিষ্ঠাকাল-১৯১১

* প্রকাশিত পত্রিকা- ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা’ ।

* প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- কাজী ইমদাদুল হক

* প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

* অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা- কমরেড মুজফফর আহমেদ, মাওলানা আকরাম খাঁ, মুহম্মদ মোজাম্মেল হক, কাজী ইমদাদুল হক ।

মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি

* ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে নওয়াব আবদুল লতিফ প্রতিষ্ঠা করেন ।

* মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি মূলক একটি সাহিত্য সমিতি। মুসলমানরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক, স্বাধীন চিন্তাধারার বিকাশ ও স্বকীয় অবস্থার পর্যালোচনার মাধ্যমে জাতীয় জীবনের উন্নতি সাধন করুক- এটাই ছিল সমিতির উদ্দেশ্য।

হিন্দু কলেজ, ইয়ংবেঙ্গল এবং ডিরোজিও

* হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে, ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে কলেজের নাম পরিবর্তিত হয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজ হয়।

* ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৭ বছর বয়সে হেনরি লুই ডিভিয়ান ডিরোজিও শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সমাজের রন্ধ্রপথে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা কুসংস্কারের জঞ্জাল সড়ানোর জন্য তিনি ছাত্রদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। ডিরোজিওর শিষ্যরাই ইয়ং বেঙ্গল নামে পরিচিত। তারা সবাই ইংরেজি ভাবধারা পুষ্ঠ বাঙালি যুবক ।

* ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে, ইয়ংবেঙ্গল প্রথমে আত্মপ্রকাশ করে ।

* তাদের মুখপত্র- ‘এনকোয়ারার’ (ইংরেজি), জ্ঞানান্বেষণ, ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’ পত্রিকাগুলি । ডিরোজিও সম্পাদিত পত্রিকা-হেসপারাস ইস্ট ইন্ডিয়ান’

* ডিরোজিওর নিকট ‘নব্য বাংলা’ বা ‘ইয়ংবেঙ্গল’ যে শিক্ষা পেয়েছিলেন- আস্তিকতা হোক, নাস্তিকতা হোক, কোন জিনিসকেই পূর্ব থেকে গ্রহণ না করতে, জিজ্ঞাসা ও বিচার, এই তাদের মূলমন্ত্র ।

*  ডিরোজিওর জন্ম ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দ, এবং ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ মাত্র ২৩ বৎসর বয়সের অকালে অস্তমিত হন ।

ডিরোজিওর বিখ্যাত ছাত্ররা হলেন- তারাচাঁদ চক্রবর্তী, প্যারীচাঁদ মিত্র, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণানন্দ মুখোপাধ্যায়, রাম গোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, মাধবচন্দ্ৰ মল্লিক, কালিকা প্রসাদ ঘোষ, হরচন্দ্র ঘোষ, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ ।

কল্লোল গোষ্ঠী

* দীনেশরঞ্জন দাসের সম্পাদনায় ১৩৩০ বঙ্গাব্দের বৈশাখে কল্লোল (১৯২৩) পত্রিকা প্রকাশিত হয় । এ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে যে লেখক গোষ্ঠী জড় হলেন তাদের কে কল্লোল গোষ্ঠী নামে অভিহিত করা হয় । ‘কল্লোল’ পত্রিকায় তাদের সাহিত্যিক ধ্যানধারণা প্রকাশ করতেন । কল্লোল গোষ্ঠীভুক্ত কবি সাহিত্যিকরা হলেন- প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্য সেনগুপ্ত, গোকুলচন্দ্ৰ নাথ, মনীন্দ্রলাল বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, মোহিতলাল মজুমদার, নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। 

এ যুগ সম্পর্কে অচিন্ত্য সেনগুপ্ত লিখেছেন- “বস্তুত কল্লোল যুগে এ দুটোই প্রধান সুর ছিল- (১) প্রবল বিরুদ্ধবাদ (২) বিহ্বল ভাববিলাস” ।

এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি

•  এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা-স্যার উইলিয়াম জোন্স। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন । এর উদ্দেশ্য ছিল- উন্নততর গবেষণা মানুষ ও প্রকৃতি সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান ইত্যাদি অনুসন্ধান ।

•  এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠার পৃষ্ঠপোষক- ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস’

•   এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায়। ভারত বিভাগের পর ৩ জানুয়ারি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে এর নাম হয় বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ।

•  এশিয়াটিক সোসাইটি ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে ‘বাংলাপিডিয়া’ নামে (দশ খণ্ড) এনসাইক্লোপিডিয়া বের হয়। এর প্রধান সম্পাদক- অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম ।

•   বাংলাপিডিয়া হচ্ছে জাতীয় জ্ঞানকোষ ।

Write Reply...