মধ্যযুগের শুরুতে ১২০১-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের নিদর্শনহীনতাকে “The Dark Age’ বা আঁধার যুগ বলা হয়েছে। গবেষকগণ মনে করেন তুর্কি আক্রমণের ফলে এ দেশে হত্যা এবং ধ্বংসের যে যজ্ঞ চলে তাতে অনেক মন্দির মঠ ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যের নিদর্শন পুঁথিসমূহ ধ্বংস হয়। যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন সেখানে সাহিত্য সংস্কৃতির উন্মেষ বা বিকাশ কিছুই চলতে পারে না। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসবেত্তাগণ ড. সুকুমার সেন, ড. অসিতকুমার, ড. গোপাল হালদার, ড. সুনীতিকুমার, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ উপর্যুক্ত মত প্রকাশ করেন।

ডঃ সুকুমার সেন বলেছেন- “মুসলমান অভিযানে দেশের আক্রান্ত অংশে বিপর্যয় শুরু হয়েছিল।” ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়- “শারীরিক বল, সমরকুশলতা ও বীভৎস হিংস্রতার দ্বারা মুসলমানেরা অমানুষিক বর্বরতার মাধ্যমে বঙ্গ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তামস যুগের সৃষ্টি করে।”

অন্ধকার যুগের সাহিত্যক নিদর্শন : ***

(i) প্ৰাকৃতপৈঙ্গল – প্রাকৃত ভাষার গীতিকবিতা গ্রন্থ । এটি অন্ধকার যুগের প্রথম নিদর্শন ।

(ii) শূন্যপুরাণ এবং এর কলিমা জালাল বা নিরুঞ্জনের রুম্মা– রচয়িতা রামাই পণ্ডিত। এতে ৫১টি অধ্যায় আছে । গ্রন্থে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মিশ্রণ ঘটেছে। এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত ধর্ম পূজার গ্রন্থ ।

(iii) সেক শুভোদয়া – এটি হলায়ুধ মিশ্র রচিত। তিনি রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন । প্রচুর ভুল সংস্কৃত থাকায় ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এ গ্রন্থকে “Dog Sankrit’ বলেছেন । এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত পীরমাহাত্ম্য প্রকাশক কাব্য ।

অন্ধকার যুগের বিপক্ষের পণ্ডিত (১) ড. এনামুল হক (২) ড. আহমদ শরীফ (৩) ড. ওয়াকিল আহমদ ।

ড. আহমদ শরীফ বলেছেন- “বাংলা বার, তের ও চৌদ্দ শতকের মধ্যভাগ অবধি লেখ্যভাষার স্তরে উন্নীত হয়নি । এটি হচ্ছে বাংলার স্বাকার প্রাপ্তির কাল ও মৌলিক রচনার কাল।”

Write Reply...